নবী ইউনুস (আঃ) পরিচিতি
নবী ইউনুস (আঃ) ছিলেন বনী ইসরাইল বংশীয় একজন বিখ্যাত নবী তিনি নবী ঈসা (আঃ) এর প্রায় আটশত বছর আগে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ইতিহাস থেকে জানা যায় তাঁর পিতার নাম ছিল মাত্তা।
তিনি নিজের ধর্মপরায়ণতা ও চরিত্রিক গুণে আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহ লাভ করেছিলেন ৷
আল্লাহতায়ালা তাঁকে নবী হিসেবে অভিষিক্ত করে নিনেভা নগরের অধিবাসীদের ধর্মপথ দেখাতে নির্দেশ দেন ৷
মেসোপটেমিয়া যা বর্তমানে ইরাক নামে পরিচিত, তার দক্ষিণ অংশে
রাজধানী ও সবচেয়ে বড় নগরী ..
এ্যাসিরিয়া নামক একটি বড় রাজ্য ছিল।
নিনেভা ছিল এই এ্যাসিরিয়ার নিনেভা সে সময়ে একটি বিখ্যাত ও সমৃদ্ধশালী নগরীরূপে বিশেষ প্রসিদ্ধিলাভ করেছিল,
তৎকালীন আধুনিক নগর নিনেভায় শ্বেত পাথরে ,বড় বড় দালান কোঠা ও রাজপথের দু দিকে সারি সারি ফল ও ফুলগাছের সমারোহ ছিল .
দূরের ও কাছের দেশ থেকে লোকেরা এখানে ব্যবসা বা ভ্রমণের উদ্দেশ্যে ভিড় করত। রাজপথ লোকের কলগুঞ্জনে মুখরিত হয়ে থাকত।
শিল্পকলায়ও তারা অনেক সুনাম অর্জন করেছিল।
নিনেভার লোকেরা সব দিক দিয়েই বেশ স্বচ্ছল ছিল।
কিন্তু দুঃখের বিষয়,
তাবা আলাহ তায়ালার নির্দেশিত পথ থেকে বহু দরে সরে গিয়েছিল
তারা বিভিন্ন ধরনের মূর্তি পূজা করত। আর শুধু নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত থাকত।
কাউকে সাহায্য করা বা কারো মঙ্গল সাধন করার কথা তারা কখনই ভারত
না। নিনেভা নগরী তখন পাপে ডুবে গিয়েছিল
ইউনুস (আঃ) এর নবী নির্বাচিত হওয়া ও দায়িত্বভার গ্রহণ
ইউনুস (আঃ) আল্লাহতায়ালার নির্দেশ পেয়ে, বর্ণিত আছে ২৮ বছর
বয়সে নবী নির্বাচিত হলেন। তিনি স্পষ্ট বুঝতে পারলেন যে, এতদিন
পর্যন্ত নিনেভাবাসীরা আল্লাহতায়ালার পথে চলবার মতো সঠিক কোনো
উপায় খুঁজে পায়নি। এখন তাদের এতদিনের বদ-অভ্যাস বদলানো বেশ দলানো বেশ কঠিন কাজ হবে|
তরুণ নবী ইউনুস (আঃ) উদ্যম ও আশা নিয়ে আল্লাহতায়ালার আদেশ পালনে উদ্যোগী হলেন |
সে সময়ে নিনেভায় দারাকিন নামক এক কাফের রাজা রাজত্ব করত।
নিনেভা নগরীতে উপস্থিত হয়ে নবী ইউনুস (আঃ) রাজা দারাকিনের
দরবারে এলেন। এসে অত্যন্ত বিনীত অথচ দীপ্তকণ্ঠে রাজাকে বললেন,
মাননীয় রাজা বাহাদুর, আপনি আমার অপরাধ নেবেন না। আমি একটি
সত্য কথা বলতে এখানে এসেছি। এবং তা হচ্ছে আল্লাহ ছাড়া আর কোনো
উপাস্য নেই । আমি তাঁর প্রেরিত নবী। আপনাকে অনুরোধ করছি, মূর্তিপূজা
ছেড়ে আপনারা আসল বিশ্বস্রষ্টা ও প্রতিপালকের উপাসনা করুন। তাহলে
আপনারা ইহকাল ও পরকালে শান্তি ও সম্মান পাবেন।
নিনেভাবাসীদের কারো কারো মনে একটু সন্দেহ জাগল।
নবী বোধহয় সত্য কথাই বলছেন, কিন্তু হঠাৎ কী করে তারা তাদের পৈত্রিক ধর্ম ও রীতিনীতি ছেড়ে দেয়?
নবী ইউনুস (আঃ) এর দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টা
নবী ইউনুস (আঃ) তাঁর সর্বশক্তি দিয়ে আন্তরিকভাবে নিনেভার লোকদের
আল্লাহর পথে আনতে চেষ্টা করতে থাকেন। তিনি রাতদিন অধিকাংশ সময়ই
লোকদের ভালভাবে পরিচালিত করার জন্যে প্রাণপাত পরিশ্রম করেন।
নিনেভাবাসীদের ঐশ্বর্যের সীমা ছিল না। তারা প্রায় সময়ই পরস্পরের সাথে
ঝগড়াবিবাদে লিপ্ত থাকত, আর একে অন্যের ক্ষতি করার চিন্তাই করত।
তিনি তাদের বলতেন, ভাইয়েরা আমার, তোমরা নিজেদের মধ্যে বিবাদ
করে কেন অযথা অশান্তি সৃষ্টি করো?
তোমরা এসব বন্ধ করো, দেখবে কত শান্তিতে তোমরা থাকবে।
একে অন্যকে ক্ষমা করতে ভালবাসতে ও সদয় হতে শেখ! আর একটা বিশেষ অনুরোধ,
তোমরা মিথ্যে অলীক উপাসনা ছেড়ে দিয়ে, এই পৃথিবী, আসমান সমূহ ও যাবতীয় প্রাণী যিনি সৃষ্টি করেছেন,
একমাত্র সেই স্রষ্টা মহান আল্লাহতায়ালার এবাদত করো!
তিনি অনেক দিন, অনেকভাবে নিনেভাবাসীদের পবিত্র জীবন যাপন করতে উপদেশ দেন, আর
আল্লাহতায়ালার একাত্মতা প্রসঙ্গে তাদের বোঝান।
নবী ইউনুস (আঃ) এভাবে নিনেভাবাসীদের চল্লিশ বছর ধরে সরল
পথে আনবার জন্যে নানাভাবে চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাঁকেও তাঁর পূর্ববর্তী
নবীদের মতো অধার্মিক লোকদিগকে ধর্মের পথে আনতে খুবই বেগ পেতে
হয়েছিল ..
নিনেভাবাসীরা তাঁর কথার কোনো রকম গুরুত্বই দিত না নবী
যখন ধর্মের কথা ভাল আচরণ, ক্ষমা, দয়া এসব প্রসঙ্গে বলতেন, লোকেরা
অবজ্ঞাভরে তাকে পাশ কাটিয়ে চলে যেত। নবী কিন্তু তাতে দমে যেতেন না
তিনি নতুন উদ্যমে অত্যধিক বিনীতভাবে তাদের সভ্যের পথে
আসবার জন্যে আহ্বান জানাতেন | বিশ্বাস করতে কষ্ট হতো যে, এই লোকগুলো মহান
আল্লাহ তায়ালার গৌরব সম্বন্ধে এত অন্ধ কী করে হতে পারছে।
তিনি এদের কোনো সাধারণ জ্ঞান বা বোধশক্তিও নেই।
স্পষ্টই উপলব্ধি করলেন যে নিনেভাবাসীরা অত্যন্ত উদ্ধত শুধু তাই নয়,
এদের কোনো সাধারণ জ্ঞান বা বোধশক্তিও নেই।
নবী ইউনুস (আঃ) এর নিনেভাবাসীদের পরিত্যাগ করা
ইউনুস (আঃ) সুদীর্ঘ চল্লিশ বছর ধরে নিনেভাবাসীদের আল্লাহর পথে
আনার জন্য নানানভাবে চেষ্টা করে শুধু বিদ্রূপ, গঞ্জনা ও অমানবিক নিষ্ঠুর
নির্যাতনই সহ্য করলেন।
এর মধ্যে কয়েকজন কিছু দিনের জন্য ইমান আনলেও পরিপূর্ণ ইমান
কেউই আনেনি।
অত্যন্ত রেগে গিয়ে তাদের বললেন,
“তোমরা যদি চল্লিশ দিনের মধ্যে
আল্লাহ তায়ালার ওপর দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস না আন, তবে শীঘ্রই একদিন খুব
সকালে আল্লাহর তরফ থেকে আগুনের বাতাস হইতে শুরু করবে। এরপর
আগুনের বৃষ্টি ও নানান রকম বিপর্যয়ের পরে তোমরা ধ্বংস হয়ে যাবে!"
এইসব কথা বলেই তিনি আল্লাহতায়ালার অনুমতি ছাড়াই অন্যত্র সরে পড়লেন
নির্দিষ্ট সময়ে গরম বাতাস বইতে শুরু করে।
ঘন কালো মেঘে আকাশ ছেয়ে যায় ।
আযাব আসন্ন দেখে নিনেভাবাসীরা নবীর সভ্যতায় বিশ্বাসী
হয়।
তারা ইউনুস (আঃ) এর গৃহে এসে দেখে, তিনি সেখানে নেই! তারা
তাকে অনেক খোঁজাখুঁজি করে, কিন্তু কোথাও তাঁর সন্ধান মিলে না
তখন
তারা নিজেদের মূর্তিগুলো ভেঙে চুর্ণ-বিচূর্ণ করে সবাই একস্থানে সমবেত হয়ে
মাটিতে লুটিয়ে সেজদা দিয়ে আল্লাহতায়ালার কাছে ক্ষমা চেয়ে,মুক্তির জন্যে দোয়া করতে থাকে।
বর্ণিত আছে, চল্লিশ দিনের শেষে ১০ই মুহাররম শুক্রবার আশুরার দিন আল্লাহতায়ালা তাদের দোয়া কবুল করেন .
সব বিপদ কেটে যায়।
আল্লাহতায়ালা কুরআন মজীদে বলেছেন,
"যখন তারা ইমান আনল, করে দিলাম " (সূরা ইউনুস, ১৮)
তখন আমি তাদের ওপর থেকে পার্থিব জীবনের অপমানজনক শাস্তি দূর
এতে ইউনুস (আঃ) আর সহ্য করতে না পেরে একদিন
Doa Yunus Prophet Yunus Surah Yunus Story of Prophet Yunus Prophet Yunus Dua Benefits
0 মন্তব্যসমূহ